সুইডেনের ন্যাটোয় যোগদান বিষয়ে এরদোয়ানের সমর্থন

অবশেষে চলতি সপ্তাহে সুইডেনের ন্যাটোয় যোগদানের বিষয়ে সমর্থন জানিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। তার এই সমর্থনের পর আন্তর্জাতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে, দীর্ঘদিন ধরে বেঁকে বসে থাকা এরদোয়ান হঠাৎ কেন রাজি হলেন?

আঙ্কারা বলছে, ৫০ বছর ধরে ঝুলে থাকা ইইউ'র সদস্যপদ পেলেই সুইডেনের বিষয়ে এগোবে তুরস্ক। তুর্কি প্রেসিডেন্টের এমন কৌশলী অবস্থানে নতুন চাপে পড়েছেন পশ্চিমা মোড়লরা। এ শর্তে ইউরোপীয় ইউনিয়ন দ্বিমত পোষণ করলেও অনড় অবস্থানে এরদোয়ান। বিশ্লেষকরা বলছেন, রাশিয়া ছেড়ে এবার পশ্চিমাদের দিকে ঝুঁকছে তুরস্ক।

ইউক্রেনে রাশিয়া সামরিক অভিযান শুরুর পর মস্কোর ওপর নেমে আসে একের পর এক পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার খড়গ। চাপ সৃষ্টির মধ্যদিয়ে পশ্চিমারা যখন ক্রেমলিনকে একঘরে করতে উঠে পড়ে লাগে, ঠিক সে সময় রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপে অস্বীকৃতি জানিয়ে উল্টো দেশটির সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক সম্প্রসারণ করে তুরস্ক।

যুদ্ধ বন্ধে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকাও পালন করতে দেখা যায় আঙ্কারাকে। শুধু তাই নয়, রাশিয়ার আতঙ্কে নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে যেসব দেশ পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোতে যোগ দেয়ার আবেদন জানায়, তাদের জন্যও প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়ান তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান। 

কিন্তু সময়ের ব্যবধানে হঠাৎ যেন সব ওলট-পালট। চলতি মাসেই ন্যাটোর সদস্যপদ পাওয়ার পক্ষে ইউক্রেনকে সমর্থন দেয় রাশিয়ার কৌশলগত মিত্র তুরস্ক। ইস্তাম্বুলে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির সঙ্গে এক বৈঠকে এরদোয়ান বলেন, ন্যাটোর সদস্যপদ পাওয়ার যোগ্যতা রাখে ইউক্রেন।

যদিও লিথুয়ানিয়ার রাজধানী ভিলনিয়াসে সদ্য শেষ হওয়া ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলনে পশ্চিমা দেশগুলো নেতাদের বক্তব্যে স্পষ্ট হয়, সহসা ন্যাটোয় যোগ দিতে পারছে না ইউক্রেন।

শুধু তাই নয়, জোটে অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে সুইডেনকে নিয়ে এতদিন তীব্র বিরোধিতা করলেও, এক বছর না যেতেই সেই অবস্থান থেকে সরে এসেছেন এরদোয়ান। এমনকি সদ্য শেষ হওয়া ন্যাটো সম্মেলনেও সুইডেনের ন্যাটোয় যোগদানের পক্ষে সমর্থন জানিয়েছেন তিনি। 

অথচ কয়েক দিন আগেও সুইডেনে কোরআন অবমাননার ঘটনায় এরদোয়ান জানিয়েছিলেন, ন্যাটোয় সুইডেনের অন্তর্ভুক্তিকে সমর্থন দেবে না তুরস্ক। দীর্ঘদিন ধরে বেঁকে বসে থাকা এরদোয়ান হঠাৎ কীভাবে ভোল পাল্টালেন তা নিয়ে নানা জল্পনা দেখা দিয়েছে। 

যদিও সুইডেনের ন্যাটোয় যোগদানের পেছনে কঠিন শর্ত জুড়ে দিয়েছেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেছেন, প্রথমে ৫০ বছর ধরে ঝুলে থাকা তুরস্কের ইইউ'র সদস্য হওয়ার দ্বার উন্মুক্ত করতে হবে। শুধু তাই নয়, তুরস্ককে এফ-১৬ যুদ্ধবিমানও দিতে হবে। এরপরই সুইডেনের ন্যাটোতে যোগদানের বিষয়ে এগোবে তুরস্ক।

আর এতেই বেঁধেছে বিপত্তি। এরদোয়ানের শর্তে বেশ চাপে পড়েছেন ইউরোপের মোড়লরা। ন্যাটো এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নে যুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়া আলাদা উল্লেখ করে ইইউ বিষয়টি নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত হলেও নিজের অবস্থানে অনড় এরদোয়ান।

এদিকে ন্যাটোতে সুইডেনের যোগদানের প্রস্তাবে তুরস্ক সম্মতি দেয়া নিয়ে তেলে-বেগুনে জ্বলছে রাশিয়া। মস্কোর অভিযোগ, ন্যাটোতে যোগ দিলে দেশটিতে পশ্চিমাদের সামরিক তৎপরতা বাড়ার সুযোগ তৈরি হবে।

সেক্ষেত্রে রাশিয়ার নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা ক্রেমলিনের। আর তুরস্কের সাম্প্রতিক কার্যক্রম নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে বলেও জানায় মস্কো। এছাড়া দেশটিকে ইইউ'র সদস্যপদ প্রাপ্তির আশা ছেড়ে দেয়ারও পরামর্শ মস্কোর। 

তবে এরদোয়ানের এমন কৌশলী অবস্থানে বিশ্লেষকরা বলছেন, তিক্ততা দূর করে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো মিত্রদের সঙ্গে আবারও সুসম্পর্ক তৈরি করতে চাইছে তুরস্ক।

এছাড়া রাশিয়াকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন করতে তুরস্ককে রুশ বলয় থেকে দূরে সরিয়ে নিতে তৎপর পশ্চিমারাও। এসব বিবেচনায় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো বলছে, নিজেদের লাভের আশায় ভোল পাল্টে এবার রাশিয়া ছেড়ে পশ্চিমাদের দিকে ঝুঁকছে তুরস্ক।_রয়টার্স

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //